রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪২ অপরাহ্ন
আলোর সংবাদ ডেস্ক- শুক্রবারকে আরবিতে বলা হয় ‘ইয়াউমুল জুমুআ।’ ‘জুমুআ’ অর্থ সমাবেশ কিংবা সপ্তাহ। এদিনটি মুসলমানদের সমাবেশের দিন। সপ্তাহের এই একদিন মুসলমানরা মসজিদে সমবেত হয়। তাই একে ইয়াউমুল জুমুআ বলা হয়। বাংলায় জুমার দিন, জুম্মাবার কিংবা শুক্রবার। দিনটি স্বমহিমায় মহিমান্বিত, অনুপম মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এদিনটির আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আছে আলাদা মর্যাদা এবং শ্রেষ্ঠত্ব। তাই এদিনটি সব সময়ই আলাদাভাবে গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়।
আল্লাহতায়ালা নভোমণ্ডল, ভূমণ্ডল এবং গোটা জগতকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। এই ছয় দিনের শেষ দিন ছিল জুমুআর দিন। এদিনেই আদি পিতা হজরত আদম (আ.) সৃজিত হন। এদিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং এদিনেই তাকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়। কেয়ামত এদিনেই সংঘটিত হবে। এই দিনে এমন একটি মুহূর্ত আসে, তখন মানুষ যে দোয়াই করে, তা-ই কবুল হয়। -ইবনে কাসির
একটি হাদিসে আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মধ্যে শ্রেষ্ট দিন হলো শুক্রবার।’ (বুখারী)
মুসলমানদের জন্য জুমার নামাজ একটি বিশেষ নামাজ। এক মহল্লার ও এক এলাকার সকল মানুষ এক সাথে নামাজ পড়ে থাকেন। তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামাজে দাঁড়ায় করেন। সবাই এক সাথে নামাজ পড়ে মূলত আল্লাহর প্রতি সবার বিশ্বাস আছে তাই। আসলে যার আল্লাহর প্রতি কোনো বিশ্বাস নেই সে কিন্তু কোনো নামাজই পড়ে না। এমনকি সবার সঙ্গে জুমার নামাজও পড়ে না।
বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম দেশগুলোতে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন পালিত হয়। তবে কোনো দেশেই শুক্রবারের নামাজ পড়ার জন্য রাষ্ট্রীয় কোনো আইন বা বধ্যবাধকতা নেই। তবে বেশিরভাগ দেশেই দেখা যায়, মুসলিমরা জুমার নামাজের আজান শুনলে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দেন। এটা তারা করে থাকেন মূলত আল্লাহ মহানের আদেশ পালনার্থে।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঐ সব লোক, যারা ঈমান এনেছো, জুমার দিন যখন নামাজের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন আল্লাহর যিকরের দিকে ধাবিত হও এবং বেচাকেনা ছেড়ে দাও। এটাই তোমাদের জন্য বেশী ভাল যদি তোমাদের জ্ঞান থাকে। তারপর যখন নামাজ শেষ হয়ে যায় তখন ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো। এবং অধিক মাত্রায় আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা সফলকাম হবে।’ (সূরা জুমআ, আয়াত-৯-১০)
জুমার দিনের ফজিলত সম্পকে আমাদের নবী (সা.) একটি হাদিসে বলেছেন, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না।’ (তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯, পৃষ্ঠা : ২৮৩)
আরো একটি হাদিসে এসেছে, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (স.) যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই।’ (মুসলিম)
উল্লেখিত বর্ণনা ও কুরআন-হাদিসে আলোচিত ফজিলতের বিবেচনায় জুমার দিনটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে এতোটা গুরুত্বপূর্ণ।