রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

নোটিশ :
পথ নিউজে স্বাগত। আপনার প্রতিষ্ঠানের সংবাদ অথবা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। ফোন: 01775816181

কোরবানির সওয়াব ও বিভিন্ন বিধান

কোরবানির ফজিলতের ব্যাপারে হজরত জায়দ ইবনে আকরাম বলেন, সাহাবায়ে কেরাম নবী করিম (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করেন, কোরবানি কী? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কোরবানি হলো তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আ.) এর সুন্নত।’

এতে আমাদের সওয়াব কী? নবী করিম (সা.) বলেন, ‘কোরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বদলায় একটি করে সওয়াব রয়েছে। ভেড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ভেড়ার প্রত্যেকটি পশমের বদলায়ও একটি করে সওয়াব রয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘কোরবানির দিন কোরবানির চেয়ে উত্তম আমল নেই। কিয়ামের দিন কোরবানির পশুকে শিং, পশম ও খুরসহ পেশ করা হবে এবং কোরবানির জন্তুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহ তায়ালার কাছে তা কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা খুব আনন্দ চিত্তে কোরবানি কর।’

কোরবানি যাদের ওপর ওয়াজিব
১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে যেসব প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্ক, মুকিম ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে অর্থাৎ স্বীয় হাজাতে আসলিয়্যাহ বা মৌলিক প্রয়োজন (পানাহার, বাসস্থান, উপার্জনের উপকরণ ইত্যাদি) ছাড়া অতিরিক্ত এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, যা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমপরিমাণ (টাকার অঙ্কে আনুমানিক ৫৫ হাজার টাকা) হয়, সে ব্যক্তির ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাবপত্র, পোশাক-আশাক, আসবাবপত্র, তৈজসপত্রও ধর্তব্য হবে। সে সম্পদের ওপর এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়।

♦ পাগল ব্যক্তির কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে না।

♦ মুসাফিরের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। মুসাফির ব্যক্তি কোরবানির দিনগুলো অতিবাহিত হওয়ার পর যদি বাড়ি ফিরে আসে, তাহলেও তার ওপর কোরবানির কাজা করা লাগবে না। (ফাতাওয়া কাজিখান ৩/৩৪৪; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৪; আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫)। উল্লেখ্য, ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করে তাকে মুসাফির বলা হয়।

♦ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব। তার স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ও বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে কোরবানি করা ওয়াজিব নয়।

♦ যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়, সে কোরবানির নিয়তে পশু ক্রয় করলে সে পশু কোরবানি করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়।

♦ যে ব্যক্তি প্রতি বছর নিজ প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের পক্ষ থেকে কোরবানি করেন, তার জন্য নতুন করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

♦ যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব, সে যদি কোনো কারণবশত কোরবানি না করে, তাহলে কোরবানির দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটি বকরির মূল্য সদকা করা ওয়াজিব।
কোরবানির পশু

♦ ছয় শ্রেণীর পশু দ্বারা কোরবানি করা যায়। গরু, মহিষ, উট, দুম্বা, ছাগল, ভেড়া। এগুলো ছাড়া অন্য কোনো প্রাণী দ্বারা কোরবানি করা শুদ্ধ নয়। যেমনÑ হরিণ ও বন্যগরু ইত্যাদি। (ফাতাওয়া কাজিখান ৩/৩৪৮; বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫)।
কোরবানির পশুর বয়স

♦ উট হলে সর্বনিম্ন পাঁচ বছর বয়সী হতে হবে। গরু ও মহিষ হলে কমপক্ষে দুই বছর বয়সী হতে হবে। ভেড়া, দুম্বা, ও ছাগল হলে সর্বনিম্ন এক বছর বয়সী হতে হবে।

♦ ভেড়া, দুম্বা ও ছাগলের বয়স যদি একটু কমও হয়, কিন্তু এরূপ মোটাতাজা যে এক বছর বয়সীদের মাঝে ছেড়ে দিলে তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ। তবে অন্তত ছয় মাস বয়সী হতে হবে।

♦ বকরির ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কোনো অবস্থায়ই এক বছরের কম হলে কোরবানি জায়েজ হবে না।

♦ কোনো পশুর ব্যাপারে বিক্রেতা যদি দাবি করে পশুটি কোরবানির উপযোগী হয়ে গেছে, অপরদিকে ক্রেতার কাছে মনে হয় যে পশুটি কোরবানির উপযোগী নয়, তাহলে বিক্রেতার কথা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।

যে সব পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নেই
♦ যে পশুর সিং গোড়া থেকে উঠে যায় অথবা এমনভাবে ভেঙে যায় যে, প্রাণীর মস্তিষ্কে আঘাত লাগে, সে পশু দিয়ে কোরবানি হবে না। তবে কোনো পশুর যদি জন্মগতভাবে সিং না থাকে অথবা সিং মাঝখান দিয়ে ভেঙে যায়, তাহলে তার দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে।

♦ যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা এক চোখ পূর্ণ অন্ধ বা একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি এক-তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে বেশি নষ্ট, তা দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়।

♦ যে পশুর জন্মগতভাবে কান নেই, সে পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ নয়। হ্যাঁ, যদি পশুর কান থাকে আর তা এত ছোট যে না থাকার মতোই, তাহলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ আছে।
যে পশুর লেজের এক-তৃতীয়াংশ বা তার চেয়ে বেশি কেটে যায়, তার দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়।
♦ যে পশু ল্যাংড়া, তিন পা দ্বারা চলতে পারে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও তার ওপর ভর দিতে পারে না, সে পশু দ্বারা কোরবানি জায়েজ হবে না।
♦ যে পশুর একটি দাঁতও নেই, তা দ্বারাও কোরবানি জায়েজ হবে না।
♦ কোনো উদ্দেশ্যে কোরবানি মান্নত করলে উদ্দেশ্য পূরণ হলে সে ধনী হোক বা গরিব, তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।

অংশীদারের ভিত্তিতে কোরবানির বিধান
♦ কোনো ব্যক্তি যদি পশু খরিদ করার সময় শরিক না নেয়ার ইচ্ছা থাকে, পরবর্তিতে শরিক নিতে চায়, তাহলে ক্রেতা গরিব হলে শরিক নিতে পারবে না, ধনী হলে পারবে।
♦ যার সব উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরিক হিসেবে নিলে অন্যদের কোরবানিও ফাসিদ হয়ে যাবে।

♦ যদি কোরবানির পশু কেনার সময় সব অংশীদারের ওয়াজিব কোরবানি আদায় করার নিয়ত থাকে, তাহলে পশু খরিদ করার পর ৭ জন পর্যন্ত নতুন অংশীদার নেয়া যাবে। কিন্তু যদি তাদের মধ্য থেকে একজন নফল কোরবানি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে আর অতিরিক্ত শরিক নেয়া যাবে না। তাই শরিক নেয়ার বিষয়টি পশু খরিদ করার আগেই চূড়ান্ত করে নেয়া উচিত।

ঋণ করে কোরবানি করা
কোনো ব্যক্তির ওপর সম্পদের হিসাবে কোরবানি করা ওয়াজিব। কিন্তু তার কাছে নগদ অর্থ নেই, আবার সে কোরবানি জন্য সম্পদ বিক্রিও করতে চায় না, তাহলে সে প্রয়োজনে ঋণ করে হলেও কোরবানি করবে। যেমন সে তার অন্য প্রয়োজনে ঋণ করে থাকে।

মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি
মৃত ব্যক্তির নামে কোরবানি করা জায়েজ আছে। এটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তি সওয়াবের অধিকারী হবেন এবং এ কোরবানির গোশত সাধারণ কোরবানির মতো যা ইচ্ছা তা-ই করতে পারবেÑ খেতেও পারবে আবার দানও করতে পারবে। তবে কোরবানি যদি মৃত ব্যক্তির ওয়াসিয়তের ভিত্তিতে হয়, তাহলে সে কোরবানির গোশত কোরবানিদাতার ওপর খাওয়া জায়েজ নয়, বরং তা সদকা করে দিতে হবে।

জীবিত মানুষের নামে কোরবানি
জীবিত মানুষ একজন অপরজনের পক্ষ থেকে কোরবানি করলে কোরবানি শুদ্ধ হয় এবং যার পক্ষ থেকে করা হয়েছে, সে তার সওয়াব পেয়ে যায়। আর যদি তার নির্দেশক্রমে হয়, তাহলে তার ওয়াজিব কোরবানি আদায় হয়ে যায়।

♦ নিজ এলাকায় কোরবানি করা উত্তম। অন্য এলাকায় কোরবানি করালেও জায়েজ আছে।

হাজীদের কোরবানি
কোনো হাজী যদি ৮ জিলহজের ১৪ দিন আগে মক্কায় পৌঁছে তাহলে, সে মক্কায় মুকিম সাব্যস্ত হবে। সে যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তাকে হজের কোরবানি ছাড়াও ভিন্ন একটি কোরবানি করতে হবে। এ কোরবানিটি হারামের এলাকায় করা আবশ্যক নয়। নিজ এলাকায়ও করা যায়। তবে সে যদি ৮ জিলহজেও ১৪ দিন আগে মক্কায় না পৌঁছে, তাহলে সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে তার ওপর সাধারণ কোরবানি ওয়াজিব নয়। তামাত্তু বা কেরান হজ করলে দমে শুকুরের কোরবানি করতে হবে।

নবী করিম (সা.) নামে কোরবানি
কোরবানি নবী করিম (সা.) এর নামে করা জায়েজ আছে এবং গোশত বণ্টনের বিধান সাধারণ কোরবানির মতোই।

চামড়ার বিধান
কোরবানির চামড়া যদি বিক্রি না করে আপন অবস্থায় রেখে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে ব্যবহার করতে পারবে। তবে টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়, তাহলে ওই টাকা সদকা করে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে মাদরাসার গোরাবা ফান্ডে এ টাকা দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। কারণ এতে দান ও করা হয় আবার দ্বীনি ইলম শেখার ক্ষেত্রে সাহায্যও করা হয়। চামড়ার টাকার মূল্য জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার করা বৈধ নয়।

♦ কোরবানির চামড়ার টাকা মসজিদ মাদরাসা নির্মাণকাজে বা বেতন বাবদ বা অন্য কোনো নেক কাজে খরচ করা জায়েজ হবে না।

যেসব কোরবানির গোশত সাদকা করা ওয়াজিব
১. মান্নতের কোরবানির গোশত, ২. মৃত ব্যক্তির ওয়াসিয়তের ভিত্তিতে তার সম্পদ থেকে কোরবানি করা হলে, ৩. কোরবানির পশু খরিদ করার পর সে পশু বাচ্চা দিলে সে বাচ্চা সাদকা করে দেওয়া ওয়াজিব, ৪. কোরবানির দিনগুলোয় কোরবানি করতে না পারলে পরবর্তিতে পশু ক্রয় করে জীবিত সদকা করে দেয়া ওয়াজিব। আর যদি জবেহ করে দেয়, তাহলে গোশত সদকা করা ওয়াজিব। অংশীদারদের কোনো একজনের নিয়ত যদি থাকে বিগত বছরের কোরবানি কাজা করা, তাহলে সবারই কোরবানির গোশত সাদকা করে দেয়া ওয়াজিব।

সংবাদটি শেয়ার করুন:


আর্কাইভ

FriSatSunMonTueWedThu
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930 
       
     12
24252627282930
31      
   1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930  
       

 

© All rights reserved © 2025 Pathnews.net 
Design & Developed BY Hostitbd.Com