আলোর সংবাদ ডেক্স:
করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা জালিয়াতিতে জড়িত জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) কথিত চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ ওরফে শাহেদ করিমের সঙ্গেও সখ্য ছিল সাবরিনার। তারা একে অপরের পূর্ব পরিচিত। একসঙ্গে ডিজে পার্টিতেও যেতেন তারা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ ও সাবরিনা একে অপরকে জানাশুনার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন বলে আজ রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে জাতীয় দৈনিক মানবজমিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে থেকেই তারা একে অপরকে চিনতেন। নিয়মিত পার্টিতে অংশ নিতেন। সেই পার্টিতে চলতো ডিজে-মাদকতা। শাহেদ-সাবরিনা ছাড়াও সেই পার্টিতে সমাজের আরও অনেক চেনামুখ অংশ নিতেন।
এছাড়া তারা দিয়েছেন আরও অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। করোনা সনদ জালিয়াতির আইডিয়া শাহেদের কাছ থেকে পেয়েছেন ডা. সাবরিনা।
জানা যায়, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কাজ ভাগিয়ে নিতে ব্যবহার করেছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সরকারদলীয় চিকিৎসক সংগঠনের একাধিক চিকিৎসককে। এছাড়া এক ব্যবসায়ীর হোটেল জোরপূর্বক দখল করে ব্যবসা করতেন শাহেদ। করোনাকালে দখল করা সেই হোটেলটি সরকারকে দিয়েছিলেন।
গোয়েন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা ৬নং সেক্টরের পার্কের পাশের মিলিনিয়াম রেস্টুরেন্টটি রাজবাড়ীর এক বাসিন্দার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জাপানে ছিলেন। জাপানি এক নারীকে বিয়েও করেছেন। তার স্ত্রী ও এক মেয়ে জাপানেই থাকেন। দেশে এসে তিনি ওই রেস্টুরেন্টটি করেন। পরে ২০১৯ সালে যৌথভাবে ব্যবসার জন্য রিজেন্টের শাহেদের সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন। চুক্তিতে বেশকিছু শর্তও জুড়ে দিয়েছিলেন। শর্তের মধ্যে ছিল শাহেদকে মাসে মাসে একটা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু কিছুদিনের মাথায় শাহেদ সেই হোটেলের যাবতীয় নিয়ন্ত্রণ নিজের কব্জায় নিয়ে নেন। হোটেলের মূল মালিককে হোটেলে ঢুকতে দিতেন না। হোটেলটির নিচে খাবারের রেস্টুরেন্ট ছিল। সেখানে জাপানি খাবারের আয়োজন করা হতো।
হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জন ডা. সাবরিনা চৌধুরী জাপানি খাবার পছন্দ করতেন। তাই তিনি ওই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে যেতেন। সেখানে শাহেদের সঙ্গে তার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। শাহেদের দখল করা হোটেলের ওপরে আবাসিক ব্যবস্থা ছিল। তাই প্রায়ই সেখানে আমোদ ফুর্তি ও মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হতো। বিত্তশালীদের আনাগোনা ছিল বেশ। সাবরিনা প্রায়ই এসব পার্টিতে অংশ নিতেন। এরপর থেকে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হতো।
পুলিশ জানিয়েছে, শাহেদ কিছুদিন হোটেলটি তার কব্জায় রেখে পরিচালনা করেছেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ওই হোটেলটি স্বাস্থ্য অধিদফতরকে দেন। শাহেদের মালিকানাধীন রিজেন্ট হাসপাতালটি ছিল করোনা ডেডিকেটেড। তাই সেখানকার চিকিৎসক-নার্সদের সেখানেই রাখা হতো।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জোরপূর্বক দখল করে নেওয়ায় হোটেলের মূল মালিক উত্তরা পূর্ব থানায় শাহেদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও করেছিলেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার খন্দকার রেজাউল হাসান বলেন, শাহেদ হোটেলের মূল মালিককে বিতাড়িত করে দখল করে নেয়। করোনাকালে ওই হোটেলটি সরকারকে দিয়ে দেয়। হোটেলটিতে চিকিৎসক-নার্সরা থাকতেন। শুনেছি করোনার জন্য হোটেল বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে টাকা নিয়েছে। তবে আসলেই টাকা তুলেছে কিনা সেটি জানি না। বর্তমানে হোটেলটিতে খাবার ও আবাসিক কোনও ব্যবস্থাই চালু নাই বলে জানান তিনি।
এদিকে রিমান্ডে ডা. সাবরিনা চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরী প্রথম দিকে মুখ না খুলে একে অপরকে দোষারোপ করেছেন। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের কৌশলী জিজ্ঞাসাবাদে এখন তারা মুখ খোলা শুরু করেছেন। একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তারা তাদের সকল অপকর্মের কথা স্বীকার করেছেন। এসব অপকর্মের জন্য কিছুটা অনুশোচনাবোধও হচ্ছে তাদের। ডিবি’র জেরার মুখে সাবরিনা ও আরিফ তাদের সহযোগীদের নাম জানিয়েছেন। কারা তাদের কীভাবে সহযোগিতা করেছেন। বিনিময়ে তাদেরকে কি দিতে হয়েছে। ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা ও আরিফ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের বর্তমান ও সাবেক মিলিয়ে অন্তত আটজন কর্মকর্তার নাম বলেছেন।
ডিবি’র তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে সাবরিনা জানিয়েছে, ওভাল গ্রুপের মাধ্যমে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেক কাজ আগে থেকেই করতো। চিকিৎসক নেতাদের মাধ্যমে তারা সেই কাজ পেয়েছিলো। আরিফ সেসব কাজ পরিচালনা করলেও সাবরিনা কাজ পাবার ব্যবস্থা করতো। এ ভাবে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। এজন্য করোনা পরিস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহের আইডিয়া পাবার পর তারা খুব সহজেই কোনো রকম কাগজপত্র, ট্রেড লাইসেন্স ও অফিস ছাড়া কাজ বাগিয়ে নেয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের সহযোগী ও মদতদাতাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে তদন্ত করা হবে। করোনার মতো জটিল পরিস্থিতিতে তারা মানুষের জীবন নিয়ে খেলেছে। জাল সনদ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করে টাকা নিয়েছে। তাই এধরনের কাজে যারা যারা জড়িত তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হবে। এর বাইরে ওভাল গ্রুপের কিছু পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জেকেজিতে চাকরি করতো এমন কয়েকজন পলাতক আছে। তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সম্পাদক মন্ডলী:
• সম্পাদক ও প্রকাশক: শফিক আহমেদ সাজিব
• মোবাইল: 01775816181
• পৃষ্ঠ পোষকতায়ঃ লায়ন হাকিম আলি।
Office Address:
• Shikalbaha karnaphuli chattogram.
• Email: pathnewsbd@gmail.com
• website:pathnews.net
Design & Development By HosterCube Ltd.